ভগ্নহৃদয়
নলিনীর প্রবেশ
[দূর হইতে] কবি।   পূর্ণিমারূপিণী বালা! কোথা যাও, কোথা যাও!
একবার এই দিকে মুখানি তুলিয়া চাও!
কি আনন্দ ঢেলেছ যে,   কি তরঙ্গ তুলেছ যে
আমার হৃদয়মাঝে একবার দেখে যাও!
দিবানিশি চায়, বালা, অধীর ব্যাকুল মন
ও হাসি-সমুদ্র-মাঝে করে আত্মবিসর্জন!
হেরি ওই হাসিময় মধুময় মুখপানে
উন্মত্ত অধীর হৃদি তিল দূর নাহি মানে—
চায়, অতি কাছে গিয়া ওই হাত দুটি ধরি
অচেতনে কাটাইয়া দেয় দিবা বিভাবরী!
একটি চেতনা শুধু জাগি রবে অনিবার—
সে চেতনা তুমি-ময়— ওই মিষ্ট হাসি-ময়—
ওই সুধামুখ-ময়— কিছু— কিছু নহে আর!
আমার এ লঘু-পাখা কল্পনার মেঘগুলি
তোমার প্রতিমা, বালা, মাথায় লয়েছে তুলি—
তোমার চরণ-জ্যোতি পড়িয়া সে মেঘ-’পরে
শত শত ইন্দ্রধনু রচিয়াছে থরে থরে!
তোমার প্রতিমা লয়ে কিরণে-কিরণে-ভরা
উড়েছে কল্পনা, কোথা ফেলিয়ে রেখেছে ধরা!
হরিত-আসন-’পরে নন্দনবনের কাছে
ফুলবাস পান করি বসন্ত ঘুমায়ে আছে,
ঘুমন্ত সে বসন্তের কুসুমিত কোল-’পরে
তোমারে কল্পনারাণী বসায়েছে সমাদরে—
চারি দিকে জুঁইফুল   চারি দিকে বেলফুল—
ঘিরে ঘিরে রহিয়াছে অজস্র কুসুমকুল,
শাখা হতে নুয়ে প’ড়ে পরশিয়া এলো চুল
শতেক মালতীকলি    হেসে হেসে ঢলাঢলি,
কপালে মারিছে উঁকি   কপোলে পড়িছে ঝুঁকি
ওই মুখ দেখিবারে কৌতুহলে সমাকুল,
অজস্র গোলাপ-রাশি পড়িয়া চরণতলে