ভগ্নহৃদয়
না জানি কি মনোদুখে আকুল শিশিরজলে!
তোমার প্রতিমা লয়ে কল্পনা এমনি করি
খেলাইয়া বেড়াইছে, নাহি দিবা বিভাবরী—
কভু বা তারার মাঝে কভু বা ফুলের ’পরে
কভু বা উষার কোলে কভু সন্ধ্যামেঘস্তরে;
কত ভাবে দেখিতেছে,   কত ছবি আঁকিতেছে—
প্রফুল্ল-আনন কভু হরষের হাসি-মাখা,
অভিমান-নত আঁখি কভু অশ্রুজলে ঢাকা।
কাছে এস, কাছে এস, একবার মুখ দেখি—
তোল গো, নলিনীবালা, হাসিভারে নত আঁখি!
মর্মভেদী আশা এক লুকানো হৃদয়তলে,
ওই হাতে হাত দিয়ে প্রাণে প্রাণে মিশাইয়ে
বসন্তের বায়ু সেবি কুসুমের পরিমলে
নীরব জোছনা রাতে বিপাশাতটিনীতীরে
ফুলপথ মাড়াইয়া দোঁহে বেড়াইব ধীরে!
আকাশে হাসিবে চাঁদ, নয়নে লাগিবে ঘোর,
ঘুমময় জাগরণে করিব রজনী ভোর!
আহা সে কি হয় সুখ!   কল্পনায় ভাবি মনে
বিহ্বল আঁখির পাতা মুদে আসে দু-নয়নে!
মুরলা।     [স্বগত]   হৃদয় রে!
এ সংসারে আর কেন রয়েছি আমরা?
তুচ্ছ হতে তুচ্ছ আমাদেরো তরে আজ
তিলমাত্র স্থান কি রে রাখিয়াছে ধরা!
এখনো কি আমাদের ফুরায় নি কাজ?
হৃদয় রে!   হৃদয় রে!   ওরে দগ্ধ মন!
আমাদের তরে ধরা হয় নি সৃজন!
কবি।     মুরলা লো! চেয়ে দেখ্‌— চেয়ে দেখ্‌ হোথা!
বল্‌ দেখি এত হাসি এত মিষ্ট সুধারাশি
হেন মুখ হেন আঁখি দেখেছিস্‌ কোথা?
মুরলা।      এমন সুন্দরী আহা কভু দেখি নাই—
কবির প্রেমের যোগ্য আর কিবা চাই!
কবিতার উৎস-সম ও নয়ন হতে