ভগ্নহৃদয়
মোরে দাও সবগুলি— গাঁথিব ফুলের বালা,
গলায় দুলায়ে দিব গাঁথিয়া চাঁপার মালা,
আসন রচিয়া দিব দিয়ে শত শতদল!
তা হলে কি দিবি মোরে— বল্‌ সখি বল্‌ বল্‌—
যতগুলি ফুল গাঁথি যত তার দল আছে
ততেক চুম্বন আমি লইব তোমার কাছে!
যত দিন না পারিবি শুধিতে চুম্বন-ধার
এ ভুজে রহিবি বদ্ধ এই বক্ষকারাগার!
দিবানিশি সজনি লো রেখে দেব চোখে চোখে!
বল্‌ তবে ফুলসাজে সাজায়ে দেব কি তোকে?
বলিবি না?   ভালো, সখি, দুইটি চুম্বন দাও—
নাহয় একটি দিও, মহার্ঘ হল কি তাও?
ললিতা।                   [স্বগত]
আরেকটি বার, সখা, কর গো চুম্বন মোরে—
আরেকটি বার, সখা, রাখ গো বুকেতে ধরে!
জান আমি মুখ ফুটে সরমে বলিতে নারি,
তাই কি সহিতে হবে?     এত শান্তি, সখা, তারি?
আদরে হৃদয়ে যদি রাখ এ মাথাটি মোর,
আদরে চুম গো যদি আঁখির পাতাটি মোর,
তাহাতে আমার, সখা, অসাধ কি হতে পারে?
তবে কেন ব্যথা দিতে শুধাইছ বারে বারে?
আকুল ব্যাকুল হৃদি মিলিবারে তব পাশে
শতবার ধায়, সখা, শতবার ফিরে আসে!
দীন আপনারে, হেরে এমন সে লাজ পায়
তোমার কাছেতে, সখা, সঙ্কোচে না যেতে চায়!
সখা, তারে ডেকে নাও— তুমি তারে ডেকে নাও—
তোমারি সে মুখ চেয়ে দাঁড়াইয়া একধার,
একটু আদর পেলে স্বর্গ হাতে পাবে তার!
অনিল।     ডুবিছে চতুর্থী চাঁদ বিপাশার নীরে।
আয় সখি, আয় মোরা ঘরে যাই ফিরে।
আঁধারে কাননপথ দেখা নাহি যায়,
আয় তবে আরো কাছে— আরো কাছে আয়।