ভগ্নহৃদয়
মিশাও কপোলে মোর ললিত কপোল তব!
কথা কও কানে,কানে,     মৃদু প্রণয়ের গানে
জাগাও ঘুমন্ত হৃদে সুখস্বপ্ন নব নব!
মনে আছে সেই রাত্রে কত সাধনার পরে
একটি সংগীত, সখি, গিয়াছিলে গাহিবারে—
আরম্ভ করেই সবে অমনি থামালে গীত,
নিজের কণ্ঠের স্বরে নিজে হয়ে সচকিত!
সেই আরম্ভের কথা এখনো রয়েছে কানে,
সেই আরম্ভের সুর এখনো বাজিছে প্রাণে!
সে আরম্ভ শেষ, বালা, আজিকে করিতে চাই!
বড়ো কি হতেছে লাজ?     ভালো, সখি, কাজ নাই!
ললিতা।     [স্বগত] কি কহিব? বড়ো, সখা, মনে মনে পাই ব্যথা,
না জানি গাহিতে গান, না জানি কহিতে কথা!
কত আজ বেছে বেছে তুলেছি কুসুমভার,
কতখন হতে আজ     ভেবেছি ভুলিয়া লাজ
নিশ্চয় এ ফুলগুলি দিব তারে উপহার!
হাতটি এগিয়ে আজ গিয়েছিনু কতবার,
অমনি পিছায়ে হাত লইয়াছি শতবার!
সহস্র হউক লাজ,     এ কুসুমগুলি আজ
নিশ্চয় দিব গো তাঁরে না হবে অন্যথা তার!
কিন্তু কি বলিয়া দিব?     কি কথা বলিতে হবে?
বলিব কি— “ফুলগুলি     যতনে এনেছি তুলি,
যদি গো গলায় পর’ মালা গেঁথে দিই তবে”?
ছি ছি গো বলি কি করে— সরমে যে যাব মরে—
নাইবা বলিনু কিছু, শধু দিই উপহার!
দিই তবে? দিই তবে?     দিই তবে এইবার?
দূর হোক্‌ কি করিব?     বড়ো যে গো লজ্জা করে!
থাক্‌ গো এখন থাক্‌— দিব আরেকটু পরে!
অনিল।     কি হয়েছে?   দিতে কি লো চাস্‌ ফুল-উপহার?
দে-না লো গলায় গেঁথে, কিসের সরম তার?
একটি দাও তো সখি, পরাই তোমার চুলে।
আর দুটি দাও সখি, পরাইব কর্ণমূলে।