ভগ্নহৃদয়
বাহির হইতে চায় তার সেই মৃদু হাসি—
অধরের চারি ধারে কতবার উঁকি মারে,
লজ্জায় মরিয়া যায় কেবল দুই পা আসি!
তার মুখ পূর্ণরাকা শরমের মেঘে ঢাকা,
মধুর মুখানি তার আমি বড়ো ভালোবাসি!
ললিতার চেয়ে কি গো মুখখানি ভালো এর?
উভেরই মধুর মুখ——দুই ভাব দু-জনের—
ললিতা সে লাজময়ী মুখেতে নাইক কথা,
মাটি-পানে চেয়ে আছে যেন লজ্জাবতী লতা;
নলিনী, নলিনীসম কেমন রয়েছে ফুটি,
বরষার নদী জল করিতেছে টলমল
হেলি দুলি লহরীতে পড়িতেছে লুটি লুটি।
উভেরই মধুর মুখ ললিতার, নলিনীর—
অধীর সৌন্দর্য্য কারো, কারো বা প্রশান্ত স্থির!
কিন্তু নলিনীর মুখ ভাবের খেলার গেহ—
সেথা ভাবশিশুগুলি করিতেছে কোলাকুলি,
কেহ বা অধরে হাসে, নয়নে নাচিছে কেহ,
এই যে অধরে ছিল এই সে নয়নে গেছে,
দু-দণ্ড খেলায়ে কেহ ঘুমাইয়া পড়িয়াছে!
কভু বা দু-তিন জনে নাচিতেছে এক সনে,
পলক পড়িতে চোখে আর তো তাহারা নাই—
নলিনীর মুখখানি ভাবের খেলার ঠাঁই!
নলিনীর মুখপানে যতই চাহিয়া থাকি
নূতন নূতন শোভা দেখিতে পায় যে আঁখি!
কিন্তু ললিতার মুখ কখনো এমন নয়।
এত সে কয় না কথা, এত ভাব নাই সেথা,
নহে গো এমনতর অধীমাধুর্যময়!
নাই বা এমন হল তাহাতে কি আছে হানি?
নাহয় দেখিতে ভালো নলিনীর মুখখানি!
তবু ললিতারে মোর ভালো আমি বাসি তো রে!
তবু ত সৌন্দর্য্য তার এ হৃদি রয়েছে ভরে!
রূপেতে কি যায় আসে? রূপ কেবা ভালো বাসে?