ভগ্নহৃদয়
কোথা হতে আসিয়াছে কোথায় বা যাবে!
এখনি নলিনী-কাছে যাই একবার,
এখনি ঘুচিবে এই বিষাদের ভার!
মুরলা সখি লো, তুমি থাকিস্ হেথাই,
ফিরে এসে পুনঃ যেন দেখিবারে পাই!
[কবির প্রস্থান
মুরলা। ফিরে এসে মুরলারে পাবে না দেখিতে!
কবি মোর, আরেকটু যদি গো থাকিতে!
নলিনী তো চিরজন্ম রহিবে তোমার,
আমি যে ও মুখ কভু হেরিব না আর!
ও মুখ কি আর কভু পাব না দেখিতে
যত দিন হবে মোরে বাঁচিয়া থাকিতে?
পল যাবে, দণ্ড যাবে, দিন যাবে, মাস যাবে,
বর্ষ বর্ষ করি যাবে জীবন আমার—
ও মুখ দেখিতে তবু পাব নাকো আর?
মুরলা, পারিবি তুই? পরিবি থাকিতে?
দারুণ পাষাণে মন বাঁধিয়া রাখিতে?
না, না, না, মুরলা তুই যাইবি কোথায়?
অসীম সংসারে তোর কে আছে রে হায়?
হবে যা অদৃষ্টে আছে, থাকিস কবির কাছে—
কবি তোর সুখ শান্তি হৃদয়ের ধন,
থাকিস জড়ায়ে ধরি কবির চরণ,
কবির চরণে শেষে ত্যজিস জীবন!
কিন্তু স্বার্থপর তুই কি করিয়া রবি?
বিষণ্ন ও মুখ তোর নিরখিয়া কবি
এখনো কাঁদেন যদি, এখনো তাঁহার হৃদি
পুরানো বিষাদ যদি করে গো স্মরণ?
সেই ছেলেবেলাকার বিষাদযন্ত্রণাভর
আমি যদি তাঁর মনে জাগাইয়া রাখি—
তবে, রে হতভাগিনী, কি বলিয়া থাকি!
তবে আমি যাই, তবে যাই, তবে যাই—
কেহ মোর ছিল নাকো, কেহ মোর নাই!