ভগ্নহৃদয়
তুমি ভালোবাস ব’লে আপনি এনেছি তুলে,
নেবে কি এ ফুলগুলি, রাখিবে কি কাছে?
কবি।     সখি লো, নলিনী কাল দুটি চাঁপা তুলে
পরায়ে দেছিল মোর দুই কর্ণমূলে,
পরশিতে দলগুলি পড়িছে ঝরিয়া,
এখনো সুবাস তার যায় নি মরিয়া।
মুরলা।      দেখি সখা, একবার দেখি হাতখানি—
এ হাত কাহারে, কবি, করিবে অর্পণ?
কত ভালো তোমারে সে বাসিবে না জানি!
না জানি, তোমারে কত করিবে যতন!
কিসে তুমি রবে সুখী      সকলি সে জানিবে কি?
দেখিবে কি প্রতি ক্ষুদ্র অভাব তোমার?
তোমার ও মুখ দেখি     অমনি সে বুঝিবে কি
কখন পড়েছে হৃদে একটু আঁধার!
অমনি কি কাছে গিয়ে কত-না সাত্ত্বনা দিয়ে
দূর করি দিবে সব বিষাদ তোমার?
তাই যেন হয়, কবি, আর কিবা চাই—
তা হলেই সুখী হব রহি না যেথাই।
কবি।                     মুরলা, সখি লো,
কেন আজ মন মোর উঠিছে কাঁদিয়া?
বিষাদ ভুজঙ্গসম     কেন রে হৃদয় মম
দলিতেছে চারি দিকে বাঁধিয়া বাঁধিয়া?
ছেলেবেলা হতে যেন কিছুই হল না,
যত দিন বেঁচে রব কিছুই হবে না,
এমনি করেই যেন কাটিবেক দিন,
কাঁদিয়া বেড়াতে হবে সুখশান্তিহীন!
কেহ যেন নাহি মোর,     রবে নাকো কেহ—
ধরায় নাইক যেন বিশ্রামের গেহ।
কিছু হারাই নি তবু খুঁজিয়া বেড়াই,
কিছুই চাই না তবু কি যেন কি চাই!
কোনো আশা না করিয়া নৈরাশ্যেতে দহি,
কোনো কষ্ট না পাইয়া তবু কষ্ট সহি!